শীতকালে ঋতু পরিবর্তন হলে গর্ভবতী নারীদের সতর্ক থাকতে হবে। উপরন্তু, গর্ভবতী মায়ের এই সময়ে বিশেষ সুরক্ষা প্রয়োজন। অন্যথায়,অল্পতেই সর্দি-কাশির কবলে পড়ে গর্ভের সন্তানটিও অসুস্থ হয়ে পড়ে। জন্ম থেকেই ঠান্ডাজনিত নানা সমস্যায় ভুগতে থাকে।
গর্ভাবস্থায় মায়েদের যত্নে সব সময়ই একটু অন্যরকম, একটু সতর্ক থাকতে হয়। মা বা শিশুর যাতে কোনো সমস্যা না হয় এবং মা যেন সুস্থ থাকতে পারে সেদিকে সবসময় খেয়াল রাখতে হবে। আর ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে, গর্ভবতী মায়েদের শীতকালে বিশেষভাবে সতর্ক হতে হবে। তা না হলে অনাগত শিশুও সর্দি-কাশিতে ভুগবে।
শীতকালে সাধারণত মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং গর্ভবতী মায়েদের একটি বিশেষ অবস্থায় থাকে, তাই তাদের একটু বেশি সতর্ক থাকতে হবে। মায়ের সর্দি বা নিউমোনিয়া হতে পারে। যাদের শ্বাসকষ্ট আছে তাদের রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে। এছাড়াও, শীতকালে প্রত্যেকের অলস হওয়া স্বাভাবিক, যা গর্ভাবস্থার সাথে সম্পর্কিত স্বাভাবিক উদ্বেগগুলিকে দূর করে। শীতকালে সর্দি, ইনফেকশন, কাশি, জ্বর ইত্যাদি বেশি হয়, তাই শীতকালে গর্ভবতী হওয়ার সময় মহিলাদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত। আবহাওয়া খুব শুষ্ক, তাই হাইড্রেটেড থাকা গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই শীতে গর্ভবতী মায়েদের নিরাপদে শীত উপভোগ করতে সাহায্য করার জন্য আজ আমরা কিছু টিপস নিয়ে আলোচনা করছি।
গর্ভাবস্থায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই এই সময়ে ফ্লু ভ্যাকসিন নিয়ে নেওয়া উচিত গর্ভবতী মহিলার। দ্য সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল ঘোষণা করেছে যে ফ্লু ভ্যাকসিন নেওয়া নিরাপদ। কিছু খাবার খেয়ে শীতে ইমিউন সিস্টেমকে সচল রাখা প্রয়োজন। শাকসবজি, আদা, আমন্ড, ইয়োগার্ট বা দই, রসুন, দুধ, তৈলাক্ত মাছ, লাল বেলপেপার, ব্রকোলি ইত্যাদি খাবার গর্ভবতী মহিলাদের ডায়েটে থাকা উচিত। গর্ভাবস্থায় শরীর বেশি সংবেদনশীল থাকে। তাই অতিরিক্ত ঠান্ডা বা ধুলো, যেখানে জীবাণু বেশি সেখানে যাওয়া উচিত নয়। এর থেকে মা ও গর্ভস্থ সন্তান দুইয়েরই ক্ষতি হতে পারে।ঠান্ডার জন্য শীতে পানি খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। কিন্তু শীতেই শরীরে পানির প্রয়োজন বেশি হয়। তাই গোটা দিনে যথেষ্ট পরিমাণে পানি আবশ্যিক। অ্যাডেড সুগার দেওয়া কোনও পানীয় নয়। শীতে চা, ভালো স্যুপ, ফলের রস ইত্যাদি খান।শীতে অলস লাগে সাধারণত। কিন্তু শরীরকে সক্রিয় রাখা জরুরি। তাই এই সময়টা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে হালকা শরীরচর্চা করুন। শীতে ত্বক শুষ্ক হয় দ্রুত। তাই ত্বকের যত্নও নিন। নারকোল তেল, অ্যাপ্রিকট তেল ব্যবহার করুন। ঘন ঘন ক্রিম মাখুন। গর্ভাবস্থার পরে এমনিতেই স্ট্রেচমার্কস হয়। ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়লে স্ট্রেচমার্কস বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
পালংশাক, লালশাক, লাউশাক ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকে- যা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা কমে। তাতে হজমশক্তি বাড়ে। আঁশ জাতীয় ফল ও শাকসবজিকে বলা হয়ে থাকে অন্ত্রপরিষ্কারক। তবে যাদের রক্তে ইউরিক-এসিডের মাত্রা বেশি তাদের পালংশাক ও লালশাক কম খাওয়া উচিত। ফুলকপি খেতে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। এটি যেমন সুস্বাদু তেমনি মজাদার। কিডনি সমস্যা কমায় ফুলকপি। বাঁধাকপিতে রয়েছে প্রচুর ফসফরাস- যা শীতের সময়ে ঠান্ডার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। টমেটো ও টমেটোজাত খাদ্যে আছে লাইকোপেন। এ উপাদানও শরীর স্বাস্থ্য ভাল রাখে। শীতের শাকসবজি ও ফলমূল গর্ভবতী মায়ের ত্বক, চুল ইত্যাদির জন্যও উপকারী।
দীর্ঘক্ষণ ধরে স্নান করবেন না কিংবা গরম জল ব্যবহার করবেন না। কারণ এগুলো ত্বকের শুষ্কতা আরো বাড়িয়ে তোলে। চেষ্টা করুন ৪-৫ মিনিটে স্নান শেষ করার এবং হালকা গরম জল ব্যবহার করুন। স্নানের পরে ত্বকে ভেজা ভাব থাকতেই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। হাতে, পায়ে, মুখে এবং পুরো শরীরে ময়েশ্চারাইজার মাখুন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় ময়েশ্চারাইজার মেখে ঘুমাতে যেতে পারেন। মনে রাখতে হবে, ত্বক একেবারে শুকিয়ে নিয়ে তারপর ময়েশ্চারাইজার মাখলে কাজ হবে না। ত্বকে ভেজাভাব থাকতেই ময়েশ্চারাইজার মাখতে হবে।
অনেক গর্ভবতী মায়েরাই গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হবে ভেবে সর্দিকাশিতে ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকেন। তবে যদি আপনার সর্দিকাশি দুতিন দিনের বেশি থাকে তবে অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে এবং চিকিৎসা করাতে হবে। এসব সর্দিকাশি ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জারও লক্ষণ হতে পারে। প্রয়োজনে ডাক্তারের কাছ থেকে ফ্লু শট সম্পর্কে জেনে নিয়ে তা নিতে পারেন। ডাক্তার আপনাকে গর্ভকালীন অবস্থায় নিরাপদ ওষুধই দেবেন। যদি মায়ের ঠান্ডার সমস্যা আগে থেকেই থাকে তবে ঠান্ডা জল ব্যবহারে এবং কোনো কিছু ঠান্ডা খেতে সাবধানতা অবলম্বন করাই শ্রেয়। কারণ মায়ের কিছু হলে তা থেকে গর্ভের সন্তানের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনোভাবেই কোনো ওষুধ সেবন করা ঠিক হবে না।
নিরাপদে শীত উপভোগ করতে সাহায্য করার জন্য আজ আমরা কিছু টিপস নিয়ে আলোচনা করছি।