শীতে শিশুর যে সকল রোগ হতে পারে এবং কারণসমূহ

 

শীতকালে শিশুরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এই রোগগুলো সাধারণত ঠাণ্ডা আবহাওয়া, সংক্রমণ, এবং কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে হয়। নিচে রোগগুলোর বিস্তারিত এবং কীভাবে হয় তা আলোচনা করা হলো:

১. সর্দি-কাশি

হঠাৎ তাপমাত্রার পরিবর্তন (গরম থেকে ঠাণ্ডা) ঠাণ্ডা আবহাওয়ার সংস্পর্শে এলে শিশুরা ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে। ভাইরাসবাহিত সংক্রমণ, যেমন রাইনোভাইরাস, এসব ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া থেকে সর্দি-কাশি শুরু হয়।

২. ফ্লু (ইনফ্লুয়েঞ্জা)

শীতকালে শিশুরা বেশি ফ্লু ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়। ঠাণ্ডা পরিবেশে ভাইরাস দ্রুত সক্রিয় হয়। শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল থাকলে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

৩. নিউমোনিয়া

শীতের কারণে শিশুদের শ্বাসতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে। ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় ফুসফুসে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যায়, যা পরবর্তীতে শিশুদের নিউমোনিয়ার রূপ ধারণ করে

 ৪. ব্রঙ্কিয়োলাইটিস

শীতকালে RSV (Respiratory Syncytial Virus) এর সংক্রমণ বেড়ে যায় । এটি ফুসফুসের ছোট বায়ুপথে প্রদাহ সৃষ্টি করে।বিশেষ করে, জন্মের প্রথম ৬ মাস থেকে ১ বছরের মধ্যে শিশুর যদি ঘন ঘন সর্দিজ্বর, শ্বাসের সমস্যা হতে থাকে, তা হলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরি। ভাইরাসের সংক্রমণে শিশুদের শ্বাসনালি, ফুসফুসে এক রকম সংক্রমণ হয়, যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় ‘ব্রঙ্কিয়োলাইটিস’। 

৫. অ্যাজমার প্রকোপ

চার বছর পর্যন্ত বয়সের শিশুদের মধ্যে প্রতি চার থেকে ছয়জনের মধ্যে একজন কমপক্ষে একবার অ্যাজমা বা হাঁপানিতে ভোগে। ঠাণ্ডা বাতাসে শ্বাসনালী সংকুচিত হয়ে যায়। ধুলাবালি ও ধোঁয়া বেশি থাকলে সমস্যা বাড়ে।শীতকালে অ্যাজমার সমস্যা শিশুদের সবথেকে বেশি দেখা যায়।

৬. ত্বকের শুষ্কতা ও একজিমা

একজিমা, এটোপিক ডার্মাটাইটিস নামেও পরিচিত, এটি একটি সাধারণ ত্বকের অবস্থা যা শিশু এবং ছোট শিশুদের প্রভাবিত করে। এই অবস্থা শিশু এবং পিতামাতা উভয়ের জন্যই কষ্টদায়ক হতে পারে। শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতার অভাব, বারবার গরম পানি ব্যবহার বা অতিরিক্ত শুষ্ক পরিবেশে থাকার কারণে ত্বক শুষ্ক এবং এগজিমা দেখা দেয়।

 

৭. গলা ব্যথা ও টনসিলাইটিস

‘গলাব্যথা’ বা ‘সোর থ্রোট’ শিশুদের অসুখবিসুখের এক সাধারণ উপসর্গ। তবে মৌসুম বদলের এই সময়ে বা শীতের শুরুতে এই সমস্যা বেড়ে যায়। সাধারণত খাদ্যনালির ওপরের অংশ, টনসিল ও তার চারপাশের অংশে প্রদাহের কারণে গলাব্যথা হয়।ঠাণ্ডা বা দূষিত বাতাসে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, ঠাণ্ডা খাবার বা পানীয় গ্রহণের কারণে  গলা ব্যথা ও টনসিলাইটিস বেশি হয়।

 

৮. ডায়রিয়া বা পেটের সমস্যা

শীতে সাধারণত ভাইরাসজনিত ডায়রিয়াই বেশি হয়ে থাকে। রোটা ভাইরাস, এডিনো ভাইরাস, এমনকি অমিক্রন বা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেও ডায়রিয়া হতে পারে। ভাইরাস ছাড়াও ব্যাকটেরিয়া, প্যারাসাইট দিয়ে আক্রান্ত হয়েও ডায়রিয়া হতে পারে। শীতকালে ব্যাকটেরিয়া দূষিত খাবার বা পানি গ্রহণ,যার ফলে শিশুরা পুষ্টির অভাবে ভোগে।

 

শিশুরা সংবেদনশীল হওয়ার কারণে শীতকালে এগুলোতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই শীতের শুরু থেকেই শিশুদের সঠিক যত্ন নেওয়া জরুরি।